নিউমনিয়া কেনো হয়-নিউমনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
নিউমোনিয়া অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও একটি অতি পরিচিত রোগ। এই রোগ থেকে সাধারণভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। কেননা যদিও রোগটি সাধারণ লক্ষণ নিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তবুও রোগটি অত্যন্ত মারাত্মক। বিভিন্ন গবেষণামতে, আসছে দশকে শুধুমাত্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এত সত্বেও অনেকেই নিউমোনিয়া সম্বন্ধে এখনো অবধি অজানা । তাই আসুন আমরা আজ সর্তকতার স্বার্থে নিউমোনিয়া কেন হয়-নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রতিবছর শিশু ও বৃদ্ধসহ প্রায় নয় লক্ষেরও অধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে এই রোগের প্রভাবে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা নিউমোনিয়া নিয়ে প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন রকম জরিপের ভিত্তিতে জোরালোভাবে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। যেখানে বারবার উঠে এসেছে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাকি সতর্কতার মাধ্যমে এরূপ থেকে বেঁচে থাকার বিষয় সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিউমোনিয়া কেন হয়নি নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া আবশ্যক।
সূচীপত্রঃনিউমনিয়া কেনো হয়-নিউমনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- ভূমিকা
- নিউমনিয়া কী
- নিউমনিয়া রোগের জীবানুর নাম কী
- নিউমনিয়া কেন হয়
- নিউমনিয়া রোগের লক্ষণ
- নবজাতকের নিউমোনিয়ার লক্ষণ
- নিউমোনিয়া কতটা ক্ষতিকর
- নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে রোগ
- নিউমোনিয়া হলে কি খেতে হবে
- নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার
- নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা
- সারকথা
ভূমিকা
ফুসফুসে প্রদাহ জনিত একটি রোগ হল নিউমোনিয়া। যার সাধারণত কিছু সাধারণ লক্ষণ
প্রকাশ হয়ে থাকলেও এটি মূলত মারাত্মক বিপদজনক একটি রোগ। যা ভাইরাস ও
ব্যাকটেরিয়া সহ নানা কারণে হতে পারে। এশিয়া মহাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার
বহু মানুষ এই রোগ দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকলেও বিশ্বের প্রায় সব দেশে এ
রোগের প্রাদুর্ভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।
আরো পড়ুনঃমাইগ্রেইন কী এর লক্ষণ ও এর থেকে মুক্তির উপায়
প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের মাধ্যমে রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা না করলে এটি
হয়ে উঠতে পারে জীবন নাশক রোগ ও। আর তাই এ রোগ সম্বন্ধে বিশেষভাবে জেনে শহর এবং
গ্রাম পর্যায়ে বিস্তর তথ্য সরবরাহ এবং সতর্ক করার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি
করে মৃত্যুহার প্রতিরোধ করা এখন সকলের দায়িত্ব। তাছাড়া অচিরেই এই রোগ ভয়াবহ
আকার ধারণ করার প্রবণতা মারাত্মক।
নিউমনিয়া কী
নিউমোনিয়া মূলত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে ছত্রাকের আক্রমণে
সংঘটিত একটি রোগ। যা ফুসফুসের প্রদাহ জনিত রোগের অন্তর্ভুক্ত। ভাইরাস
ব্যাকটেরিয়া আক্রমনে ফুসফুস ফুলে ওঠার ফলে ফুসফুসে পানি জমে পুঁজের আকার ধারণ
করলে শ্বাসকষ্টের প্রবণতা দেখা যায় যা নিউমোনিয়ার ফলে সৃষ্ট।
যা স্ট্রেপকক্কাস ব্যাকটেরিয়া ও সিনসিয়াল জাতীয় ভাইরাস যা
শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়ার সৃষ্টি করে এর ফলে দেখা যায়।
নিউমনিয়া রোগের জীবানুর নাম কী
ইংরেজি Pnumonia এর প্রতিশব্দ হলো নিউমোনিয়া। যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। আর এস ভি জাতীয় ভাইরাস এবং স্ট্রেপকক্কাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়ার জীবাণুর অন্তর্ভুক্ত।
নিউমনিয়া কেন হয়
অনেকের ধারণা নিউমোনিয়া শুধু ঠান্ডা লাগার ফলে হয়ে থাকে। তবে এই ধারণা পুরোপুরি
সঠিক নয়। নিউমোনিয়া নানাভাবে হয়ে থাকে যেমন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া
ছত্রাক জাতীয় জীবাণুর আক্রমণের ফলে মূলত নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া
হওয়ার বা ছড়ানোর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমনঃ
- আক্রান্ত ব্যক্তির হাতি কাশির মাধ্যমে
- বায়ু দূষণ, ধুলো ময়লা ইত্যাদির মাধ্যমে
- দীর্ঘদিন যাবত শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগলে
- পোস্টটি হীনতায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
- দীর্ঘমেয়াদী কোন অসুখে ভুগলে। যেমন, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনি রোগ ইত্যাদি।
- স্টরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের ফলের হতে পারে।
- ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় কেমোথেরাপি নেওয়ার ফলে।
- হসপিটালে বিভিন্ন রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে। ইত্যাদি।
নিউমনিয়া রোগের লক্ষণ
নিউমোনিয়ার রোগের সাধারণত তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এরোগে প্রাথমিক
অবস্থায় সাধারণ জ্বর সর্দির লক্ষণগুলো দেখা দিলেও এর সাথে আরও বিভিন্ন
রকম দেখা যায় যেমন
- অতিরিক্ত জ্বর
- সর্দি
- কাশি
- শ্বাসকষ্ট দেখা যাওয়া
- শ্লেশা সহ কফ
- জয়েন্টে ব্যথা
- পুরো শরীর তীব্র ব্যথা
- মাথা যন্ত্রণা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- ক্লান্তি ভাব
- শিরার রং পরিবর্তন হয়ে নিলাভ দেখানো ইত্যাদি।
নবজাতকের নিউমোনিয়ার লক্ষণ
নবজাতকের বা শিশুদের নিউমোনিয়া হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখে প্রকাশ পায়
যেমন
- জর
- সর্দি
- কাশি
- বুকে ঘরঘর আওয়াজ
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
- কিছু খেতে না চাওয়া
- শরীরের নিস্তেজ হয়ে আসা ইত্যাদি।
নিউমোনিয়া কতটা ক্ষতিকর
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউনিসেফ সহ বিভিন্ন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী
প্রতিবছর ৯ লক্ষ এর অধিক শিশু মারা যায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে
।তাছাড়া এ সকল স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আসছে দশকে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটবে
শুধুমাত্র নিউমোনিয়ার কারণে। তাই বলাই যাই নিউমোনিয়াকে অনেকে হালকাভাবে নিলেও
এটি মারাত্মক ক্ষতিকর এবং কখনো কখনো মৃত্যুর ঝুঁকিও দেখা দেয়
অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে।
নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে রোগ
না নিউমোনিয়া ছোয়াচে রোগ নয়। তবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি
ইত্যাদির ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নিউমোনিয়া হলে কি খেতে হবে
নিউমোনিয়া হলে যে সকল খাবার খাওয়া ভালো
- তরল খাবার
- গরম খাবার
- পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার
- পর্যাপ্ত পানি পান করা
- আদা চা ইত্যাদি খেতে পারে।
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার কল্পে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন
- ইতোমধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
- হাঁচি কাশির সময় হাতের কনুই বা রুমাল এবং টিস্যু ব্যবহার করা
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা
- নিয়মিত হাত ধোঁয়া
- শিশুদের আদর করার সময় অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা
- ধূমপান এড়িয়ে চলা
- পর্যাপ্ত ঘুম
- নেশা জাতীয় যে কোন দ্রব্য থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি
নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা
নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা হলো এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করা। তাছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী এক্স-রে ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিউমোনিয়া প্রকাশ পেলে যথাযথভাবে
চিকিৎসা গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন
করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাটি সতর্কতার সাথে ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
সারকথা
পরিশেষে বলা যায় বর্তমান বিশ্বে বায়ু দূষণ সহ নানা কারণে নিউমোনিয়ার মত জটিল রোগের সম্মুখীন হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। যার ফলে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ সহ অনেকেই। তবে মনে রাখতে হবে নিউমোনিয়াকে কখনোই হালকাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।
বরং নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং অনতি বিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।তবে তার পূর্বেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হচ্ছে নিউমোনিয়া যাতে আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য নিজে সচেতন হওয়া এবং আশেপাশে মানুষদের সতর্ক করা
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url