শীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর উপায়
কুয়াশার চাঁদর মোড়া তীব্র শীত যেমন খেজুরের রস আর পিঠাপুলির আমেজে আনন্দ নিয়ে আসে ঠিক তেমনি অসুস্থতার উদ্বিগ্নতার ডানাও যেন মেলে ধরে অবচেতন মনে।ভাইরাস আর ব্যকটেরিয়ার স্পর্শ থেকে কী বাচ্চা কী বুড়ো কেউই যেন রেহাই পাইনা।প্রাপ্ত বয়স্করা নিজেদের সুরক্ষা করার সামর্থ রাখলেও শীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর উপায় নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন পরিবারের লোকেরা।শীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে যেন একরকম উঠে পড়ে লাগেন মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদি।
তবে খুব যে লাভের মুখ দেখা যায় তা কিন্তু নয়।সেই সাথে তো রয়েছে বাচ্চা অসুস্থ হলে রাত দিন এক করে নিদ্রাহীন উৎকন্ঠাময় সময় আর ঔষধের পেছনে টাকা খরচ।তাই বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেয়,সঠিক উপায় অবলম্বন করলে শীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানো অনেকতাই সহজ হবে বলে আশা করছি।চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক শীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর উপায় সংক্রান্ত কিছু তথ্য।
সূচীপ্ত্রঃশীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর উপায়
- ভূমিকা
- ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
- নবজাতক শিশুদের ঠান্ডা লাগলে করণীয়
- ৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
- ৬ মাসের বাচ্চার ঠান্ডা লাগলে করণীয়
- বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়া উপায়
- নবজাতকের ঠান্ডার ঔষধ
- উপসংহার
ভূমিকা
আসছে শীত । আর শীত মানে কিছু বাবা-মার কাছে আতঙ্ক। আতংকই বটে কেননা সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া কিংবা আধো আধো বলিতে বাসা মাতিয়ে রাখা ছোট্ট সোনামণি যখন শীতের তীব্রতায় ঠান্ডা লাগার সমস্যায় একেবারে নিস্তেজ হয়ে যায় তখন তা ভয়ের সৃষ্টি করে এ কথা বলার অপেক্ষায়। শীতকাল মানে একটু অসচেতনতাই কিংবা খুব বেশি সচেতনতায়ও বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগতে পারে।
সে সাথে হতে পারে সর্দির কাশি জ্বরের মত বিভিন্ন ফ্লু জাতীয় রোগের সমস্যা। তবে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর কিছু উপায় অবলম্বন করলে এটিকে রেহাই মেলে অনেকটাই। তাই আজ আমরা আলোচনা করব শীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর উপায় সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে।তবে আর কথা নয় আসুন জেনে নিই শীতকালে বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর উপায়সমূহ।
ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় একটু শীতের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেই দুই একদিন পর পরেই ঠান্ডা লাগার সমস্যায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে।এর বিভিন্ন কারণ হতে পারে।যেমন আবহাওয়ার পরিবর্তন।তাছাড়া ঘন ঘন ঠান্ডা মূলত ভাইরাসের প্রভাবে লেগে থাকে।এর মধ্য সবচেয়ে বেশী প্রাদূর্ভাব রয়েছে রাইনোভাইরাসের।যা অতি দ্রুত বংশ বিস্তার করে থাকে।
আরো পড়ুনঃডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
তাছাড়া ইমিউনিটি সিস্টেমের অপর্যাপ্ততা অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া,ভিটামিনের অভাব,পুষ্টির অভাব ইত্যাদির ফলে ঘন ঘন ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
নবজাতক শিশুদের ঠান্ডা লাগলে করণীয়
নবজাতক শিশুরা নাজুক দেহের অধিকারী হয়।সেই সাথে তারা খুব সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।এমনকি ঠান্ডা লাগার প্রবণতাও সদ্য জন্ম নেওয়া একটি শিশুর জন্য খুবই প্রকট এবং মারাত্বক।আর তাই ঠান্ডা লাগার আগে পর্যন্ত নবজাতকের যেমন বাড়তি পরিচর্যা প্রয়োজন তেমনি অপ্রত্যাশিত ভাবে ঠান্ডার সমস্যা দেখা দিলেও বাড়তি যত্নের দরকার। যেমনঃ
- শীতের পোশাক যথাযথভাবে পরিধান করানো।
- চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করানো।
- নতুনভাবে যেন ঠান্ডা না লাগে সে দিকে লক্ষ্য রাখা।
- দীর্ঘ সময় প্যাম্পার্স পড়িয়ে রাখা থেকে বিরত থাকা।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
- ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত যেকোনো প্রকার ঔষধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকা।
৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
ঠান্ডা লেগেই শিশুর সর্দি হওয়াটা খুবই সাধারণ একটি বিষয় হলেও এটি শিশুদের জন্য ভীষণই কষ্টসাধ্য একটি বিষয় বটে। তিন মাস বয়সী শিশুদের সর্দির সমস্যা দেখা দিলে অনেক সময় নিশ্বাস নিতেও সমস্যা হয়। তবে মনে রাখতে হবে সর্দি যে শুধু ঠান্ডা লেগেই হতে পারে এমনটা নয় বরং এলার্জির সমস্যা থাকলেও সর্দি দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের সর্দি লাগলে নাক বন্ধ থাকার কারণে ঘুমের মাঝে অনেক সময় শব্দ হয়। তাছাড়া বাচ্চারা তীব্র অস্বস্তিতেও ভুগতে থাকে।
আর তাই বাচ্চাদের সর্দি লাগলে নিম্নলিখিত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে বাচ্চাদের
স্বস্তি মিলে অনেক অংশেই। যেমনঃ
- বাচ্চাদের সর্দি লাগলে বুকে পিঠে তেল মালিশ করা যেতে পারে।
- এলার্জির সমস্যা থেকে সর্দি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
- অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত শীতের পোশাক পরিয়ে রাখার কারণে বাচ্চাদের ছুটির সমস্যা দেখা দেয়। আর তাই অতিরিক্ত পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- সর্দির সময় বিভিন্ন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে যা বাচ্চাকে নাক বন্ধ থেকে মুক্তি দিবে।
- এছাড়াও বিভিন্ন ঔষধ সেবন করানো যেতে পারে তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে তা যেন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হয়।
- অনেকেই বাচ্চাদের দীর্ঘ সময় প্যাম্পার্স পরিয়ে পড়িয়ে রাখেন যা থেকে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় আর তাই একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বাচ্চার প্যাম্পার্স পরিবর্তন করা উচিত।
৬ মাসের বাচ্চার ঠান্ডা লাগলে করণীয়
যে কোনো বয়সেই ঠান্ডা লাগার সমস্যা দেখা দিতে পারে।তবে বাবা-মা এর কাছে উদ্বিগ্নতার বিষয় হয়ে দাঁড়াই যখন নবজাতক শিশুরা ঠান্ডার সমস্যা ভোগে। ফ্লু থেকে শুরু করে যেকোনো কারণেই শিশুরা ঠান্ডা সমস্যা ভুগতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি অথবা স্পর্শ তার মধ্যে থাকলে বাচ্চারা খুব সহজেই ঠান্ডা লাগার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে উদ্বেগনতার কিছু নেই যদি সচেতন থাকার পরেও বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে যায় সে ক্ষেত্রে মেনে চললেই বাচ্চা অতি দ্রুত সুস্থতা লাভ করে থাকে। যেমনঃ
- বাচ্চার ঠান্ডা লাগলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন বাচ্চার পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম এবং ঘুমোতে পারে।
- অনেকে সময়ে বাচ্চাকে নিয়মিত গোসল দিতে চান না সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বাচ্চাকে নিয়মিত গোসল করানো উচিত এবং হালকা পোষণ গরম পানি দিয়ে গোসল করে না ভালো।
- অসুস্থ বাচ্চাকে যতটা সম্ভব তবে খাবার খাওয়াতে হবে। বাচ্চা যদি বুকের দুধ পান করে তবে ঘন ঘন বুকে দুধ পান করাতে হবে। এবং বাচ্চা যদি ছয় মাস বা ছয় মাসের বেশি বয়সী হয় তবে অবশ্যই বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
- অতিরিক্ত পোশাক পড়ার থেকে বিরত থাকতে হবে।
- 6 বছর বয়সী শিশুদের এবং 6 বছর বয়সী শিশুদের উর্ধ্বে যে সকল বাচ্চা আছে তাদের প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে তবে মনে রাখতে হবে যে কোন ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসার পরামর্শ জরুরী।
- ঠান্ডা লেগে শিশু সর্দির সমস্যা দেখা দেয় এবং যার ফলে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে থাকে যাতে করে বাচ্চারা ঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে না সেক্ষেত্রে কিছু উপায় অবলম্বন করে শিশুর নাক বন্ধের প্রতিকার করে দিতে পারে। এতে বাচ্চারা অস্বস্তি থেকে মুক্তি ও পেয়ে থাকে।
- বুকে পিঠে তেল মালিশ করে দিলেও ঠান্ডা লাগার অসুখ থেকে অনেকটা উপশম নিলে।
- এছাড়া বাচ্চারা যদি ছয় বছর কিংবা 6 বছরের উর্ধ্বে হয়ে থাকে তবে তাদের তুলসী পাতার রস খাওয়ানো যেতে পারে এবং সেই সাথে বিভিন্ন ভেষজ খাওয়ানো যেতে পারে।
বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে মেডিসিনের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা
যেতে পারে যা একেবারে প্রাকৃতিক এবং কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে
না। যেমনঃ
- রসুন তেলের মালিশ
- বাচ্চা যদি দুধ খায় তবে সেক্ষেত্রের মায়ের বুকের দুধ ঘন ঘন খাওয়াতে হবে এবং যদি বাচ্চা দুধের পাশাপাশি বাইরের খাবার খায় সে ক্ষেত্রে তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
- হলুদের পেস্ট বাচ্চার স্লেষ্যকে তরল করতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে এতে বাচ্চার ঠান্ডা লাগার সমস্যা কমে আসবে।
- তুলসী পাতার রস বাচ্চার কাশি উপশমের সাহায্য করে।
- ঠান্ডা লাগলেও বাচ্চাকে নিয়মিত গোসল দিতে হবে এতে উষ্ণ কুসুম গরম পানি ব্যবহার করো উত্তম।
- বাচ্চাদের ঘরেও অবস্থান করবে সে ঘর তাপমাত্রা উষ্ণ রাখতে হবে।
- বাচ্চা কে শুষ্ক স্থানে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
- ঠান্ডা লাগলে নাক বন্ধ হওয়ার প্রবণতা থাকলে সেই সাথে কাশি থাকে বিধায় এই সময়ে ওদের ক্ষেত্রে স্টিমিং করা যেতে পারে।
- মধু ঠান্ডা লাগা উপশমের অত্যন্ত কার্যকরী।
- এছাড়া বাচ্চার ঠান্ডা লাগার সমস্যা ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত জরুরী।
- বাচ্চা যদি এলার্জির কোন সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে যে কোন খাবার খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
- সর্বোপরি বাচ্চাকে যে কোন মেডিসিন খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
নবজাতকের ঠান্ডার ঔষধ
শিশুরা সাধারণত খুব সেনসিটিভ হয়ে থাকে।আর তাই তারা বিভিন্ন ে খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে ঠান্ডা অন্যতম এবং এই ঠান্ডার সমস্যা দেখা দিলে বাজারে প্যারাসিটামল সহ নানা ধরনের ওষুধ পাওয়া ও গেলেও মনে রাখতে হবে নবজাতকের যেকোন ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় শীতকাল মানে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ। সেইসাথে রয়েছে বাচ্চাদের অসুখ। তবে উদ্বিগ্নতার কিছু নেই। বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে কিছু ঘরোয়া টোটকা এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ পারে খুব সহজে বাচ্চাদের অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে।
আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজ এ পর্যন্তই আশা করছি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার
উপকারে আসবে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url